১. ভূমিকা

বর্তমান সরকারের ব্যাপক ডিজিটালাইজেশনের ফলে চারিদিকে এখন প্রযুক্তির জয়জয়কার। প্রযুক্তি এখন সবার ঘর থেকে হাতের মুঠোয় এসে পৌঁছেছে। ইন্টারনেটের ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সকলেই স্মার্টফোন ব্যবহার করছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে। প্রযুক্তির বহুল ব্যবহারের কারণে আমরা স্বল্পতম সময়ে অনেক বেশী কাজ করার সামর্থ্য অর্জন করেছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও এর ব্যতিক্রম নয়। অনলাইন বদলী, পদায়ন, এইচআরআইএস এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য জনবল ব্যবস্থাপনা, ই-নথির ব্যবহার, DHIS2 এর মাধ্যমে মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ, ই-জিপি ইত্যাদির নিয়মিত ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে অবগত আছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এইচআরআইএস সফটওয়্যারে অনলাইন আবেদন ব্যবস্থাপনা সুবিধা সংযুক্ত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী এখন থেকে অনলাইনে এইচআরআইএস সফটওয়্যারে নিজের প্রোফাইল থেকেই নিজেদের যে কোন প্রয়োজনে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনসমূহের নিষ্পত্তিও হবে অনলাইনের মাধ্যমে। আবেদন নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপের হালনাগাদ অবস্থা আবেদনকারী নিজ নিজ প্রোফাইল থেকে জানতে পারবেন।

অনলাইন আবেদন ব্যবস্থাপনা নতুন কোন ধারণা নয়। প্রচলিত নিয়মে কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ যেসব আবেদন করে থাকেন (যেমনঃ ছুটির আবেদন, বদলীর আবেদন, প্রেষণের আবেদন ইত্যাদি) এই নতুন ব্যবস্থাপনাটি তারই ডিজিটালাইজেশন মাত্র। এই ব্যবস্থাপনায় একজন আবেদনকারী তার এইচআরআইএস প্রোফাইল থেকে অতি সহজে নিজেই অথবা কোন সহকর্মীর সহায়তায় আবেদন করবেন এবং বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ তাদের স্ব স্ব এইচআরআইএস প্রোফাইল ব্যবহার করে সহজেই আবেদন নিষ্পত্তি করতে পারবেন। প্রচলিত আবেদন প্রক্রিয়ায় যে সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে সেগুলো নিরসনের লক্ষ্যেই এই নতুন উদ্যোগ। সকল পর্যায়ে অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়ার ব্যবহার আবেদনকারীর ভোগান্তি কমাবে, খরচ বাঁচাবে, কর্মঘন্টা রক্ষা করবে, পাশাপাশি সকল পর্যায়ে সেবার মান ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে।

 

২. অনলাইন আবেদন ব্যবস্থাপনা চালুকরণের যৌক্তিকতা

২.১ প্রচলিত আবেদন নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার ত্রুটি সমূহঃ

• প্রচলিত আবেদন নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া কাগজ নির্ভর।
• আবেদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করতে অনেক সময় লাগে এবং সম্পূর্ণ নিষ্পত্তি হতে কখনও কখনও ৬ মাস বা তারও বেশী সময় লাগে।
• কর্মঘন্টা ব্যয় হয়, আবেদনকারীকে আবেদন নিষ্পত্তিতে যুক্ত থাকতে হয়।
• আবেদন নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধাপে (যেমনঃ আবেদন জেলা পর্যায় থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে কুরিয়ার বা ডাকযোগে প্রেরণ) আবেদন হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
• হাতে হাতে আবেদন পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আবেদনকারীর সময় অপচয় হয় এবং অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের সুযোগ থাকে।
• কাগজে আবেদন প্রক্রিয়ায় অনৈতিক সুপারিশের সুযোগ থাকে।
• নিজে আবেদন নিয়ে বিভিন্ন ধাপে পৌঁছে দিলে আবেদনকারী যাতায়াত বাবদ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন এবং একই সাথে কর্মস্থলে উপস্থিতি বিঘ্নিত হয়।
• সর্বোপরি উপরে উল্লেখিত কারণসমূহে আবেদনকারী তার প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

২.২ অনলাইন আবেদন ব্যবস্থাপনার সুবিধাসমূহঃ

• সময় কম লাগে।
• আবেদনকারী যে কোন স্থান থেকে যে কোন সময়ে আবেদন করতে পারবেন।
• আবেদন নিষ্পত্তিকারী কর্মকর্তাও যে কোন স্থান থেকে যে কোন সময়ে আবেদন নিষ্পত্তি অথবা অগ্রায়ন করতে পারবেন।
• আবেদন হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নাই।
• আবেদনকারী যে কোন সময় তার আবেদনের হালনাগাদ অবস্থা জানতে পারবেন।
• আর্থিক লেনদেনের সুযোগ নাই।
• কর্মঘন্টা বাঁচবে।

৩. অনলাইন আবেদন ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা

• স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্য বিভাগের সকলেই প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত।
• এইচআরআইএস স্বাস্থ্য বিভাগের বহুল ব্যবহৃত একটি সফটওয়্যার। প্রত্যেকেই এই সফটওয়্যারে নিজের প্রোফাইল ব্যবস্থাপনার সাথে পরিচিত।
• স্বাস্থ্য বিভাগে একাধিক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সার্ভার ব্যবহার করা হচ্ছে।
• স্বাস্থ্য বিভাগের সকল পর্যায়ে, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও দপ্তরসমূহে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সরঞ্জামাদি আছে।
• সর্বোপরি স্বাস্থ্য বিভাগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি গ্রহণ ও ব্যবহারের আগ্রহ ও অভ্যাস বর্তমান আছে।
• স্বাস্থ্য বিভাগে সাম্প্রতিক প্রযুক্তির ব্যবহার বিবেচনায় সকল পর্যায়ে অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া চালু করা সম্ভব।

৪. অনলাইন আবেদনের ধাপসমূহ

১। কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্রাউজার (যেমনঃ গুগল ক্রোম) খুলতে হবে।

২। এড্রেস বারে hrm.dghs.gov.bd লিখে প্রবেশ করতে হবে।

৩। আবেদনকারীর নিজের ইমেইল ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এইচআরআইএস সফটওয়্যারে প্রবেশ করতে হবে।

৪। নতুন আবেদন করতে Create new application লিংকে ক্লিক করতে হবে।

৫। ড্রপডাউনে প্রদত্ত তালিকা থেকে আবেদনের ধরণ নির্বাচন করতে হবে।

৬। ড্রপডাউনের তালিকা থেকে যে কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করবেন তা নির্বাচন করতে হবে।

৭। কোন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলে তা নির্বাচন করতে হবে।

৮। আবেদনের কারণ, যৌক্তিকতা ইত্যাদি সংক্ষেপে লিখতে চাইলে তা Ground, reason or justification for need ঘরে লিখতে হবে (আবশ্যিক নয়)।

৯। আবেদনের ধরণ অনুযায়ী আনুষঙ্গিক তথ্য নির্বাচন করতে হবে।

১০। সকল তথ্য যাচাই করে Confirm and submit বাটনে ক্লিক করতে হবে।

১১। আবেদনের সাথে সংশ্লিষ্ট নথি সংযুক্ত করতে চাইলে Upload and attach file বাটনে ক্লিক করে ফাইল সংযুক্ত করতে হবে (আবশ্যিক নয়)।

১২। Submit application বাটনে ক্লিক করে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে।

১৩। এভাবে মাত্র কয়েকটি বাটনে ক্লিক করে আবেদন সম্পন্ন করা যাবে।

১৪। আবেদনের ধরণ অনুযায়ী আবেদনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে অগ্রায়ন হয়ে যাবে।

১৫। আবেদনকারী তার ব্যক্তিগত এইচআরআইএস প্রোফাইল থেকে যে কোন সময় তার আবেদনের হালনাগাদ অবস্থা জানতে পারবেন।

১৬। এই প্রক্রিয়ায় আবেদনের ধরণ অনুযায়ী ইউএইচএফপিও থেকে মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় পর্যন্ত যে কোন কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করা যাবে।

১৭। আবেদনকারীর নিজের এইচআরআইএস প্রোফাইল হালনাগাদ রাখতে হবে। অন্যথায় ভুল তথ্যের কারণে আবেদন খারিজ হতে পারে।

৫. আবেদন নিষ্পন্নের ধাপসমূহ

১। অনলাইন আবেদন ব্যবস্থাপনায় আবেদনের ধরণ অনুযায়ী ইউএইচএফপিও থেকে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অথবা মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় পর্যন্ত যে কোন কর্মকর্তা আবেদন নিষ্পত্তিকারী হতে পারেন।

২। নিষ্পত্তিকারী কর্তৃপক্ষ মাত্র কয়েকটি ক্লিক সম্পন্ন করে আবেদন নিষ্পত্তি করতে পারবেন।

৩। আবেদনকারীর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ (যেমনঃ ইউএইচএফপিও) যদি আবেদনটি নিষ্পত্তি করার এখতিয়ার রাখেন তাহলে তিনি আবেদনটি অনুমোদন/খারিজ করতে পারবেন, অন্যথায় তিনি আবেদনটি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট অগ্রায়ন করবেন।

৪। এভাবে প্রতিটি ধাপে অগ্রায়ন হয়ে আবেদনটি চূড়ান্ত অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের নিকট পৌঁছাবে। চূড়ান্ত অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ আবেদনটি অনুমোদন/খারিজ করবেন।

      ৫। ই-মেইলের ন্যায় নিজের এইচআরআইএস প্রোফাইল প্রতিদিন কয়েকবার চেক করতে হবে।

৬। ই-জিপি, ই-নথি, ই-মেইলের ন্যায় অনলাইন আবেদন নিষ্পত্তিকরণ চাকরীর অত্যাবশকীয় অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।